প্রভিশনের নতুন নির্দেশনায়ও ঘুরে দাঁড়াল না পুঁজিবাজার

সূচক ও লেনদেন কমার মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহটিতে সূচক কমার সঙ্গে লেনদেন কমেছে। সেইসঙ্গে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর অপরিবর্তিত ছিল। সূচকের পতন ও লেনদেনের অবস্থা ফেরাতে সপ্তাহের মাঝে ডিলার হিসাব ও মার্চেন্ট ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে পুনর্মূল্যায়নজনিত অনাদায়ী ক্ষতির বিপরীতে রক্ষিত প্রভিশন সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর নামমাত্র সূচক বৃদ্ধি পেলেও লেনদেন নেমে আসে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে। সপ্তাহ শেষে পুঁজিবাজারকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।এদিকে ঝুঁকি না নিয়ে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে পোর্টফোলিওকে ক্ষতি থেকে বাঁচাতে বিক্রির চাপ বেশি থাকায় বাজারে প্রভিশন নিয়ে বিএসইসির নির্দেশনার পরও ঘুরে দাঁড়ায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরপরও গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ার। ফলে এ খাতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের শীর্ষে থাকা পাট খাতে পতন হয়েছে। ফলে আলোচ্য খাতে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিনিয়োগকারীরা হতাশ এবং তারা নতুন বিনিয়োগে অনিচ্ছুক। ফলে বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তাই প্রভিশন নিয়ে বিএসইসির সিদ্ধান্তের পরও বিনিয়োগকারীরা পোর্টফোলিওতে ক্ষতি নিয়ে ভয়ে থাকায় বিক্রির চাপ বাড়িয়ে দেন। এতে বিনিয়োগকারীদের এমন উদ্বেগ ও বিক্রির চাপে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বলে জানান তারা।বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা খাদ্য খাতের শেয়ারদর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ। এ খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বা ২৫৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় স্থানে থাকা টেলিকমিউনিকেশন খাতে দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ। এ খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ বা ১০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়ে তৃতীয় স্থানে ছিল বস্ত্র খাত। খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের দশমিক ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ বা ১৮৮ কোটি টাকার।এদিকে গত সপ্তাহে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে পাট খাতে। এ খাতে গত সপ্তাহে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে। খাতটিতে ডিএসইর মোট লেনদেনের শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ বা ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ শেয়ারদর কমে আইটি, কাগজ ও মুদ্রণ, সেবা ও আবাসন খাত দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এছাড়া আর্থিক খাতের শেয়ারদর কমার বা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি।বাজার পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ডিএসইতে দুই হাজার ৫৪০ কোটি ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৫৮৪ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে ৪৪ কোটি ৮৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকার বা ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ লেনদেন কমেছে।ডিএসইতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৯ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ছয় হাজার ২২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আলোচ্য সপ্তাহে বাজার মূলধনের শীর্ষ৩০ কোম্পানির মূল্যসূচক ডিএস৩০ আগের সপ্তাহের চেয়ে ৮ দশমিক ২১ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২১৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপরদিকে ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক ৫ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৪০ শতাংশ কমেছে।ডিএসইতে গত সপ্তাহে ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫টির, কমেছে ১৪১টির। আর ২২২টির দাম ছিল অপরিবর্তিত।